জিয়াউর রহমান, শাজাহানপুর, (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ এখন হামাকেরে না খায়ে থাকা লাগবি। সকালে বাজারে ওই মাছ বেচে চাউল কিনে আনলে হামাকেরে প্যাটোত ভাত যাতো। এখন পর্যন্ত হামরা না খায়ে আছি। হামার ছোল লোন লিয়ে দারকিগুলো কিনছিলো। এখন দারকির ট্যাকা ক্যাং করে শোধ করবি আর ছোলপোলগুলো (সন্তান) কি খায়ে বাচপি। অশ্র“সিক্ত নয়নে কথাগুলি বলছিলেন ফাতেমা বেগম নামের এক অসহায় বৃদ্ধ মা। সোমবার দুপুর ২ টার দিকে বগুড়া শাজাহানপুরের চোপীনগর ইউনিয়নের কচুদহ গ্রামে সরেজমিনে গেলে এই অসহায় বৃদ্ধ মা কথাগুলি বলেন।
উপজেলার চোপীনগর ইউনিয়নের কচুয়াদহ গ্রামের নলের বিলে সারা বছর দারকি ফেলে মাছ ধরে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে ওই গ্রামের বেশ কয়েকটি দরিদ্র পরিবার। সন্ধায় দারকি ফেলে সকালে তা থেকে মাছ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে যে টাকা পায় তা দিয়ে চাল-ডাল কিনতে পারলেই যাদের পেটে ভাত যুটতো, সংসার চলতো তাদের মধ্যেই হিংসা, রেষারেষীর জের ধরে ৫ টি হতদরিদ্র পরিবারের শতাধিক দারকি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলে নস্ট করা হয়। এতে করে জীবিকার একমাত্র অবলম্বনের পথ হারিয়ে দরিদ্র পরিবারগুলির মধ্যে কাঁন্নার রোল পড়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্থ দরিদ্র পরিবারগুলির মধ্যে আশরাফ আলীর পুত্র সাইদুল ইসলাম (৩০) নামের এক ব্যক্তি বলেন, তার কিস্তিতে কেনা ১৮ টি দারকি প্রতিদিনের মত রোববার সন্ধার আগে নলের বিলে ফেলে রেখে আসি। সোমবার ভোরে দারকি তুলতে গিয়ে দেখি সবগুলি দারকি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে। এছাড়াও মনছের প্রামানিকের পুত মুকুলের ২৫ টি, মৃত তাহের মাহমুদের পুত্র জিলহকের ১০টি, বাদশার পুত্র ফারুকের ৩২ টি ও মৃত তালেব প্রামানিকের পুত্র সাদেকুলের ৫ টি সহ বেশ কয়েক জনের শতাধিক দারকি কেটে নস্ট করা হয়েছে।
বৃদ্ধা ফাতেমা বেগমের ছেলে ফারুক জানান, তার কিস্তিতে কেনা ৩২ টি দারকির সবগুলোই কেটে ফেলা হয়েছে। বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, অবুঝ দুই শিশু পুত্র সহ সবাইকে নিয়ে এখন না খেয়ে থাকতে হবে। কিস্তি শোধ না হওয়ায় নতুন করে দারকি কেনাও সম্ভব নয়।
মনছের আলীর পুত্র মুকুল বলেন, গত ৩ বছর ধরে তার দারকি কেটে ফেলা হচেছ। এবারো তার ২৫ টি দারকি কেটে ফেলা হয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলি দরিদ্র ও অসহায় হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ সাইদুল ইসলামের দুঃসম্পর্কের ভাই উপজেলা শ্রমিকলীগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন আলম বাদি ওই গ্রামের মৃত মোবারক আলীর পুত্র সমসের আলী (৫০) ও তার পুত্র শফিকুল (২৫) ও মৃত লোবা ফকিরের পুত সাইফুল ইসলামকে বিবাদী করে শাজাহানপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে সোমবার দুপুরে থানার এএসআই মোকাম্মেল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলির অভিযোগ সমসের আলী ও তার পুত্ররা অন্যদেরকে মাছ ধরতে দেবে না মর্মে সাইফুল ইসলামের সহযোগীতায় রাতের আধারে তাদের শতাধিক দারকি কেটে ফেলেছে। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল বাছেদকে জানানোর পরও তিনি তাদের কথা কর্ণপাত করেননি।
চোপীনগর ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদক খোকন মিয়া বলেন, সকালে এই অসহায় মানুষদের আহাজারী দেখে ইউপি সদস্য আব্দুল বাছেদকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানানোর পরও তিনি ঘটনাস্থলে আসেননি এবং তাদের কোন খোঁজ-খবর রাখেননি।
অভিযোগের বাদি উপজেলা শ্রমিকলীগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন আলম বলেন, অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম ইউপি সদস্য আব্দুল বাছেদের আপন ভাগিনা। যার কারনে তিনি এই অসহায়, দরিদ্র মানুষের কথায় কর্ণপাত করেননি।
ইউপি সদস্য আব্দুল বাছেদ জানান, ক্ষতিগ্রস্থরা তার বাড়িতে এসেছিলেন। তাদেরকে আগামীকাল (মঙ্গলবার) গ্রামের সবাইকে ডেকে বৈঠক বসার কথা বলা হয়েছে।