আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বুধবার সিনাইতে ১৫টি তল্লাশিচৌকি ও একটি থানায় জঙ্গিদের হামলার পর তাদের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। ওই লড়াইয়ে কমবেশি ৭০ সেনাসদস্য ও শতাধিক জঙ্গির প্রাণহানি হয়েছে। একই দিন রাজধানী কায়রোর উপকণ্ঠে পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছেন দেশটির ইসলামপন্থী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃস্থানীয় অন্তত নয়জন। খবর বিবিসি ও আল-জাজিরার।মিসরের সিনাই উপদ্বীপে ইসলামিক স্টেটপন্থী (আইএস) জঙ্গিদের গত বুধবারের হামলার জবাবে তাদের অবস্থানে বোমা ফেলা শুরু করেছে মিসরীয় বিমানবাহিনী। মিসর সরকার ঘোষণা দিয়েছে, অস্থিতিশীল সিনাই জঙ্গিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চালানো হবে।
বুধবার ভোরবেলা আচমকা ফিলিস্তিনের গাঁজা উপত্যকার কাছে অবস্থিত উত্তর সিনাইয়ের শেখ জাউয়িদ এলাকার বিভিন্ন তল্লাশিচৌকিতে আক্রমণ করে জঙ্গিরা। এর মধ্যে কয়েকটি স্থানে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। একপর্যায়ে জঙ্গিরা শহরটির প্রধান থানায় হামলা শুরু করে। শেখ জাউয়িদ এলাকার বিভিন্ন রাস্তায়ও নিরাপত্তাকর্মী বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের লড়াই চলতে দেখা যায়। অন্তত আট ঘণ্টা লড়াই চলার পর পিছু হটে জঙ্গিরা।
জনবিরল বিশাল উপদ্বীপ সিনাইতে বুধবারের সংঘর্ষ গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড়। মিসরের অ্যাটর্নি জেনারেল হিশামবারাকাত গত ২৯ জুন এক গাড়িবোমা হামলায় নিহত হওয়ার পর থেকে দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি নাজুক। হামলায় যে গাড়িটি ব্যবহার করা হয়, তাতে সিনাই প্রভিন্স নামের একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর চিহ্ন ছিল। সিনাইভিত্তিক গোষ্ঠীটির আগের নাম আনসার বায়েত আল-মাকদিস। গত বছরের নভেম্বরে ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে তারা নিজেদের নাম পাল্টে ফেলে। বুধবারের হামলার দায়ও স্বীকার করেছে সিনাই প্রভিন্স।
জঙ্গিগোষ্ঠী সিনাই প্রভিন্স এক বিবৃতি দিয়ে হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, ১৫টি তল্লাশিচৌকি ও বিভিন্ন নিরাপত্তা স্থাপনায় আত্মঘাতী হামলা ও রকেট হামলার পর প্রধান থানা ঘেরাও করে তারা। অন্যদিকে মিসরের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ‘১০০ সন্ত্রাসী’কে হত্যা করেছে। আর সংঘর্ষে নিহত সেনাসদস্যের সংখ্যা ১৭। তবে প্রত্যদর্শীরা বলেছেন, এই লড়াইয়ে সেনাবাহিনীর হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি। এমনকি চিকিৎসা বিভাগ এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা কর্মকর্তাও বলেছেন, সংঘর্ষের শুরুর দিকে নিহত হওয়া ৭০ জনের মধ্যে বেশির ভাগই সেনাসদস্য।
‘এটা একটা যুদ্ধ’: সিনাইতে জঙ্গিরা যেভাবে আক্রমণ করেছে, তাকে মিসরে নজিরবিহীন বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। স্থানীয় পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, জঙ্গিরা আশপাশের কয়েকটি ভবনের ছাদে উঠে শেখ জাউয়িদ থানার ভেতরে মর্টার ও রকেটচালিত গ্রেনেড ছুড়তে থাকে। একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা বলেন, এটা একটা যুদ্ধ। সন্ত্রাসীরা যে সংখ্যায় এই হামলায় অংশ নিয়েছে এবং তারা যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, তা নজিরবিহীন।
প্রত্যদর্শীরা জানান, ঘটনার পর জঙ্গিদের বিভিন্ন অবস্থানে বোমাবর্ষণ করে মিসরের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলো। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালেও যুদ্ধবিমানগুলোর বোমাবর্ষণ অব্যাহত ছিল। সরকারি কর্মকর্তারাও এ খবর নিশ্চিত করেছেন। সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শেখ জাউয়িদ এলাকা এখন ‘শতভাগ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে’। ওই এলাকা থেকে জঙ্গিদের নির্মূল না করা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও বিবৃতিতে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ব্রাদারহুডের নয় সদস্য নিহত: সিনাইয়ে সংঘর্ষের দিনই মিসরের পুলিশ রাজধানী কায়রোর একটি উপকণ্ঠে অভিযান চালায়। অভিযানে দেশটির বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন ব্রাদারহুডের অন্তত নয়জন নেতৃস্থানীয় সদস্য নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নাসের আল-হাফিনামের একজন সাবেক পার্লামেন্ট সদস্যও রয়েছেন। তবে ব্রাদারহুডপন্থী একটি টেলিভিশন চ্যানেল নিহতের সংখ্যা ১৩ বলে জানিয়েছে।
মিসরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুজনও ছিলেন। তাঁরা বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। তবে ব্রাদারহুড এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের নেতাদের ‘ঠান্ডা মাথায় খুন’ করা হয়েছে। এ ঘটনার ‘মারাত্মক পরিণতি’র হুমকি দিয়েছে তারা। সমর্থকদের ‘বিপ্লবে জেগে ওঠা’রও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
এখানে কি লেখা হবে?
প্রধান উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম, আইন উপদেষ্টা: এ্যাড: একেএম ফজলুল করিম, সম্পাদক: অধ্যাপক জিল্লুর রহমান বিজয়, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুর রউফ তালুকদার, সহকারী সম্পাদক: অসীম কুমার সরকার, বার্তা সম্পাদক: হুমায়ূন কবির
প্রধান কার্যালয়: কালিয়াকৈর, গাজীপুর। শাখা অফিস: কটাপুর, বগুড়া। 01710 782253
Copyright©dainikbangladeshsomoy.com All rights reserved