জিটিবি নিউজ ডেস্ক ঃ ছিটমহলের বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের ১১১টি ছিটমহলে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ জনগণনার কাজ শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে কুড়িগ্রামের ১২টি ছিটমহলের শুরু হয়েছে গণণার কাজ। গতকাল সোমবার সকাল থেকে শরু হওয়া এ গণনা চলবে আগামি ১৬ জুলাই পর্যন্ত। সকালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের অভ্যন্তরে অবস্থিত দাশিয়ারছড়া ছিটমহলে জেলার ১২টি ছিটমহলের জনগণনার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মোহাম্মদ নুরুল আমিন।
এ সময় পুলিশ সুপার মো. তবারক উল্লাহ, ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদ, ফুলবাড়ী থানার ওসি বজলুর রশিদ, ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির (বাংলাদেশ ইউনিট ) সভাপতি মইনুল হক, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা খান, দাশিয়ারছড়া ইউনিটের সভাপতি আলতাফ হোসেনসহ স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক দাশিয়ারছড়া ছিটমহলের কালিরহাট এলাকার আবদুর রাজ্জাক-শহিদা বেগম দম্পতির নাম নিবন্ধনের মাধ্যমে গণনার কাজের সূচনা করেন। পরে এক স্বাগত বক্তব্যে তিনি ছিটমহলবাসীকে কারো কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরামর্শ দেন।জনগণনার কাজে অংশ নিতে ভারত থেকে এসেছেন গণনাকারী ও সুপারভাইজাররা। তারা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা।ভারতের দিনহাটা থেকে আসা সুপারভাইজার ফিনজো সেরপা জানান, ২০১১ সালের জনগণনাকে মুলভিত্তি ধরে তারা এই সমীক্ষার কাজ করবেন। তবে এবার নাগরিকত্ব নির্ধারণে ছিটবাসীদের পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের গণনাকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আফরোজা বেগম ও মর্জিনা বেগম জানান, যৌথ দলের গণনাকারী হিসেবে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। এই কার্যক্রমে অংশ নেয়ার আগে তারা সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।দু’দেশের কর্মকর্তারা জানান, ২০১১ সালের জনগণনায় পাওয়া তথ্যের সঙ্গে এরপর জন্ম নেয়া শিশুসহ ছিটের নাগরিকদের স্ত্রীদের নাম তালিকাভুক্তকরণ ও কে, কোনো দেশের নাগরিকত্ব নিতে চান তা জানতে চাওয়া হবে।২০১১ সালে ছিটমহলে হেড কাউন্টিং এ ৭ হাজার ১১০ দশমিক ০২ একর আয়তন বিশিষ্ট বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলে ১৪ হাজার ২১১ জন লোক চিহ্নিত করা হয়। অপরদিকে, ১৭ হাজার ১৫৮ দশমিক ৫ একর আয়তন বিশিষ্ট ভারতের ১১১টি ছিটমহলে ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন লোক বাস করে। যাদের মধ্যে ৪৯টি পরিবারের ৭৪৩ জন লোক ভারতে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে এবার কতজন ভারতে যেতে চান তা নির্ধারণ হবে চলতি জনগণনার কাজ শেষ হলে। এদিকে, জনগণনার কাজ শুরু হওয়ায় ছিটমহলবাসীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎসাহ আর উদ্দীপনা। কুড়িগ্রামের ১২টি ছিটমহলে ১০টি বুথের মাধ্যমে এই জনগণনার কাজ চলছে। প্রতিটি বুথে নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ।সরেজমিনে গিয়ে দাশিয়ারছড়া ছিটমহলে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত ৭টি বুথের নিরাপত্তায় একজন অফিসারসহ দু’জন করে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কালিরহাট এলাকায় সকালে জনগণনা শুরুর আগেই নারী-পুরুষ-শিশুরা এসব বুথের সামনে এসে ভিড় করে। ছিটের বাসিন্দা বকুল মিয়া, মোস্তফা কামাল, নুরুল আমিন ও নজরুল ইসলাম জানান, তারা জনগণনায় অংশ নিয়ে তথ্য দিতে এসেছেন। তারা আরও জানান, ভারত যতই সুযোগ সুবিধা দিক না কেন তারা বাংলাদেশই থাকবেন।
অন্যদিকে, এই জনগণনাকে সামনে রেখে ছিটমহলের বাসিন্দাদের মধ্যে নিজ দেশ ভারতে যাওয়ার আগ্রহ দেখা গেছে। যদিও তারা এতোদিন জানিয়েছিল তারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে এখানেই থেকে যেতে চান। হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনই ভারতে যাওয়ার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে।
বারতে যাওয়া আগ্রহীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত হিন্দু সম্প্রদায় ভারতে যেতে চায় আত্মীয়তার কারণে। মুসলমানরা কর্মস্থান, সুযোগ-সুবিধা বেশি পাবে মনে করে বারতে যেতে চাচ্ছে।
এদিকে, ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নির্ধারণ নিয়ে ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি ও ছিটমহল ইউনাইটেড কাউন্সিল নামে দু’টি সংগঠন পরস্পর মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। সকালে ইউনাইটেড কাউন্সিলের সমর্থকরা ভারতের পতাকাসহ মিছিল নিয়ে গণনার জন্য আসা ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যদের অভিনন্দন জানাতে দাশিয়ারছড়ার কালিরহাট পুর্বটারীতে ইউনাইটেড কাউন্সিলের সভাপতি মিজানুরের বাড়ির আঙিনায় প্রায় ২০০ লোক জমায়েত হলে ফুলবাড়ী থানার পুলিশ মিছিল করতে বাঁধা দেয়।
ইউনাইটেড কাউন্সিল দাশিয়ার ছড়া ইউনিটের সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে, ৫ জনের বেশি একত্রে থাকা যাবে না। পুলিশের বাঁধা ও সমন্বয় কমিটির হুমকির কারণে তারা জরিপ ক্যাম্পে যেতে পারছেন না। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান।অপরদিকে, সমন্বয় কমিটি বাংলাদেশ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘মাদক ও চোরাকারবারীরা শুরু থেকে ছিটমহল বিনিময় চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে। তারাই এখন নানা গুজব ও মিথ্যে প্রচারণা চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি জানান, সমন্বয় কমিটি কাউকে ভারতে যেতে বাঁধা দিচ্ছেনা। তবে দালালের খপ্পরে পড়ে কেউ প্রতারিত হোক তা চায়না।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মোহাম্মদ নুরুল আমিন জানান, জনগণনার কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এখানে কি লেখা হবে?
প্রধান উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম, আইন উপদেষ্টা: এ্যাড: একেএম ফজলুল করিম, সম্পাদক: অধ্যাপক জিল্লুর রহমান বিজয়, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুর রউফ তালুকদার, সহকারী সম্পাদক: অসীম কুমার সরকার, বার্তা সম্পাদক: হুমায়ূন কবির
প্রধান কার্যালয়: কালিয়াকৈর, গাজীপুর। শাখা অফিস: কটাপুর, বগুড়া। 01710 782253
Copyright©dainikbangladeshsomoy.com All rights reserved